কুরআন ও হাদীসের আলোকে যিকির। পর্বঃ- ০২


কুরআন ও হাদীসের আলোকে যিকির।



সালাত আল্লাহর যিকির


কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, সকল প্রকার ইবাদতের মধ্য থেকে সালাতকে বিশেষভাবে যিকির হিসেবে কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন;

نَّنِىْۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ  اَنَا فَاعْبُدْنِىْ ۙ وَاَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِىْ

“আমি আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোনো ইলাহ্ নাই। অতএব আমার যিকিরের (ইবাদতের) জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা কর।”     (সুরা ত্বহাঃ ২০ঃ১৪) 

হজ্বের কর্মকাণ্ডের বর্ণনার সময় কুরআন কারীমে বলা হয়েছে;


 
 ‌لَيْسَ عَلَيْکُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَبْتَغُوْا فَضْلًا مِّنْ رَّبِّکُمْؕ فَاِذَآ اَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفٰتٍ فَاذْکُرُوا اللّٰهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَـرَامِ وَاذْکُرُوْهُ کَمَا هَدٰٮکُمْ‌ۚ وَاِنْ کُنْتُمْ مِّنْقَبْلِهٖ لَمِنَ الضَّآ لِّيْنَ

 
“তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নাই। যখন তোমরা আরাফাত হইতে প্রত্যাবর্তন করিবে তখন মাশআরুল হারামের নিকট (মুযদালিফায়) পৌঁছিয়া আল্লাহ্‌কে স্মরণ করিবে এবং তিনি যেভাবে নির্দেশ দিয়াছেন ঠিক সেইভাবে স্মরণ করিবে; যদিও ইতিপূর্বে তোমরা বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।”        (সূরা বাকারাঃ ০২ঃ১৯৮)

আমরা জানি, মুযদালিফায় হাজীগণের জন্য প্রচলিত তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদি কোনো যিকির করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। শুধুমাত্র মাগরিব ও ঈশা’র সালাত একত্রে আদায় করা ও ফজরের সালাত আদায় করাই হাজীগণের হজ্জ সংক্রান্ত বিধান। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, এখানে ‘আল্লাহর যিকির’ বলতে সালাত বুঝানো হয়েছে। ইমাম তাবারী বলেন; “তোমরা যখন আরাফাত থেকে ফিরে মুযদালিফায় চলে আসবে তখন আল্লাহর যিকির করবে। এখানে যিকির বলতে মাশআরুল হারামের নিকট সালাত ও দু’আ করাকে বুঝানো হয়েছে।”    (তাবারী, তাফসীরে তাবারী- ২/২৮৭)

আবু সাঈদ খদরী ও আবু হুরায়রা (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 

(আরবী)

“যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে উঠে তার স্ত্রীকে জাগাবে এবং দু’জনে মিলে দু রাক’আত তাহাজ্জুদ আদায় করবে আল্লাহর দরবারে তারা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ যাকিরিন বা সর্বাধিক যিকিরকারী ও যিকিরকারী গণের অন্তর্ভুক্ত হবে।”    [আবূ দাউদ, ৮-কিতাবুল বিতর, ১৩- বাবুল হাস্সি আলা কিয়ামুল লাইল ২/৭০ , ভারতীয় ১/২০৫, আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/৩২৮-৩২৯]


সকাল বিকাল আল্লাহর নামের যিকির


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন;

(আরবী)

“এবং সকালে ও বিকালে তোমার প্রভুর নাম যিকির কর।”    (সূরা ইনসানঃ ৭৬ঃ২৫)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু যাইদ বলেন : “সকালের যিকির ফজরের সালাত এবং বিকালের যিকির যোহরের সালাত।”  (তাবারী, তাফসীরে তাবারী- ২৯/২২৫)

ইমাম তাবারী বলেন : “হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার প্রভুর নামাজের যিকির করুন। সকালে ফজরের সালাতে এবং বিকালে যোহর ও আসরের সালাতের মধ্যে আপনি তাকে তার নাম ধরে ডাকুন।”  (তাবারী, তাফসীরে তাবারী- ২৯/২২৫)

আল্লামা কুরতুবী বলেন: ‘সকালে ও বিকালে আপনার প্রভুর নামের যিকির করুন, অর্থাৎ দিনের প্রথমে ফজরের সালাত ও দিনের শেষে যোহর ও আসরের সালাত আপনার প্রভুর জন্য আদায় করুন। আর দীর্ঘ  রাত্র তাঁর তাসবীহ করুন অর্থ রাতে নফল সালাত আদায় করুন।’   (কুরতুবী, তাফসীরে কুরতুবী- ১৯/১৫০)
 
তাফসীরে জালালাইনের ভাষায়; “আপনি আপনার প্রভুর নাম যিকির করুন সালাতের মধ্যে সকালে ও বিকালে অর্থাৎ ফজর, যোহর ও আসরের সালাত।”   (তাফসীরে জালালাইন- ১/৭৮৩)

হজ্জ কি আল্লাহর যিকির


কুরআন ও হাদীসের আলোকে যিকির।



আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন;

(আরবী)

“জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা ও সাফা মারওয়ার মধ্যে সাঈ করার বিধান দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর যিকির প্রতিষ্ঠার জন্য।”   [তিরমিযী, কিতাবুল হজ্জ, বাব কাইফা রামইউল জিমার - ৩/২৪৬); (ভারতীয় - ১/১৮০)। তিরমিযী বলেন; হাদীস হাসান সহীহ।]

 

        (সোর্সঃ- রাহে বেলায়েত)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url