পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও কিভাবে পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে?

 

পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও কিভাবে পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে?


২১ দিন এভাবে পানি পান করার পর নিজের শরীর দেখে চমকে উঠবেন?


আমরা এক প্রকার মানুষ পানিকে এত সাধারন মনে করি যে, আমরা মনে করি যেভাবে ইচ্ছা যতটুকু ইচ্ছা পানি খেতে পারি।  আর এটা ভাবা সম্পূর্ন ভূল। কারণ পানি দেখতে যতটা সাধারন মনে হয়, এটা যেমন আমাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ঠিক ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ঠিক তেমনি শরীরে তৈরি হওয়া বিশাক্ত পদার্থ বেড়িয়ে যেতেও সাহায্য করে। পেটের বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ে হোক বা ওজন বাড়াতে হোক কিংবা ওজন কমাতে হোক যাই হোক না কেনো এতে পানি অনেক ভূমিকা রাখে। এর জন্য পানি খাওয়ার পরিমান, পানি খাওয়ার সঠিক সময় আর কতটুকু পানি কিভাবে খেলে কি কি ক্ষতি উপকার হয়, এটা জানা জরুরী। চলুন জেনে নেয়া যাকঃ-

 

 

১। পানি আমাদের জন্য এতোটা জরুরী কেন?

২। আমাদের শরীরে পানির ভুমিকা কী কী?

৩। একদিনে সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ কতটুকু পানি পান করা যেতে পারে।

৪। হঠাৎ করে যদি পানি শুন্যতা দেখা দেয় তাহলে কি ক্ষতি হতে পারে?

৫। একবারে কত গ্লাস পানি পান করা উচিত এবং কীভাবে পান করতে হয়?

৬। পানি কখন পান করা উচিত এবং কখন পান করা উচিত নয়?

৭। পানি পান করার সঠিক সময় কখন?

৮। কেমন পানি হওয়া উচিত ঠান্ডা, গরম নাকি নরমাল?

৯। পানি ওজন বাড়ানো আর কমানোতে কিভাবে সাহায্য করে?

 

পানি আমাদের জন্য এতোটা জরুরী কেন?

 

কোন সাধারণ ব্যক্তি দিনে কতটুকু পানি পান করা উচিত। তা নির্ভর করে ওই ব্যক্তির চেহারা, ওখানকার আবহাওয়া, ওই ব্যক্তির ওজন, ওই ব্যক্তির ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটিজ এসবের উপর। কিন্তু নরমাল কোন ব্যক্তি দিনে আড়াই লিটার থেকে তিন লিটার পানি পান করা খুবই জরুরি। তা এভারেজ 8 থেকে 12 গেলাস হয়ে থাকে। আর গরমের দিনে শরীরে অতিরিক্ত ঘামের কারণে আমাদের পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই গরমের দিনে আমাদের পানি পান আরো বাড়াতে হবে, এলাকাভেদে পানি পানের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। আর যারা এক্সারসাইজ করে থাকে তাদের আরো বেশি করে পানি পান করতে হবে। কারণ এদের শরীর থেকে একটু বেশি পানি বের হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন আগে খুব বেশি পানি পান করা কি শরীরের জন্য ক্ষতি? এর উত্তর টাও খুবই সিম্পল। এটা সবাই জানেন যে কোন জিনিস খুব বেশি পরিমাণে পানি করা ক্ষতিকর। খুব বেশি পরিমাণে পান করলে, আমাদের শরীরের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়, রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এমন অবস্থা খুবই কম হয়ে থাকে। কারণ খুবই কম মানুষ এই কাজটা করেন। তাছাড়া যতটুকু প্রয়োজন তা পান করাই উচিত। তবে হ্যাঁ যারা সারাদিনের 4 থেকে 5 লিটারপানি অতিক্রম করে, তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে।


একবারে কয় গ্লাস পানি পান করতে হবে



এখন প্রশ্ন একবারে কয় গ্লাস পানি পান করতে হবে। আর কিভাবে পান করতে হবে, কিছু মানুষ আছে যারা যেভাবে ইচ্ছে যত টুকু ইচ্ছে পানি পান করে থাকে, তবে এটা ভুল। আর  পানি পানের আগে বসে পান করতে হবে। এটা সুন্নত!!! আর পানি মুখের ভিতর নিয়ে চার থেকে পাঁচ সেকেন্ড ঘুরাতে হবে, তারপর গিলে ফেলতে হবে। এমন করলে আমাদের মুখের মধ্যে থাকা লালা পাকস্থলীতে গিয়ে এনসিডেক্স প্রপার্টিজ নিরাময় করে যা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। 


দাঁড়িয়ে পানি পান করা যাবে কি?


পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও কিভাবে পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে?



দাঁড়িয়ে পানি পান করলে আমাদের কিডনি পানি ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়। আর মুখের উপর থেকে বোতল দিয়ে পানি ঢেলে পান করলে গ্যাস এবং বাইরের অনেক জীবানু শরীরে প্রবেশের আশঙ্কা থাকে। পরবর্তীতে আমাদের শরীরে জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য আমাদের উচিত! বসে থেকে তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা। একবারে এক থেকে দেড় গ্লাস পানি পান করা উত্তম। কারণ একবারে বেশি পানি পান করলে আমাদের কিডনি ঠিকভাবে ফিল্টার করতে পারে না। আর সেসব পানি বের হতে না পেরে প্রসাবের সাথে বের হতে বাধ্য হয়। পানি গরম ঠান্ডা নাকি নরমাল হওয়া উচিত। যখন আমরা খুব বেশি ঠান্ডা কিছু খেয়ে থাকি তখন শরীরের ভিতরে গরম করে, তারপর বিভিন্ন অঙ্গে কাজে লাগায়। আর পানির সাথে ঠিক এমনটাই হয়। আমরা যখন ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেয়ে থাকি, তখন আগে পানিটাকে গরম করে তারপর কাজে লাগায় এতে আমাদের শরীরে অনেক শক্তি খরচ হয়।

 

 

পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও কিভাবে পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে?

ঠান্ডা পানি খেলে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না পানি গরম হয়। আরো অনেক বেশি ঠান্ডা পানি পান করলে আমাদের হজমশক্তিও কমে যায়। এজন্য আমাদের পান করার জন্য নরমাল বা হালকা গরম পানি হওয়া উচিত। কেননা এতে করে খুব তাড়াতাড়ি পানি আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজে লেগে যেতে পারে। আর আমরা যে খাবার খাই তা খুব তাড়াতাড়ি হজম করতে সাহায্য করে। এতে করে হজমশক্তিও বারে পেট পরিষ্কার থাকে।

 

পানি কখন কখন পান করা উচিত? আর কখন কখন পান করা উচিত নয়?


 এসব না জানার কারণে মানুষ অনেক রোগে ভুগে থাকেন। পানি কখন পান করা উচিত। তার আগে জেনে আসি কখন পান করা উচিত নয়। জানা দরকার খাবার খাওয়ার আগে হালকা পানি পান করে নেয়া ভাল। এতে করে খাবার তাড়াতাড়ি পাকস্থলীতে চলে যায়। খাওয়ার আগে বেশি পানি পান করা উচিত নয়। কারণ এতে আমাদের খাবার অনেক পাতলা করে দেয়। আর আমাদের পাকস্থলী তে পাচন গুলো ঠিকভাবে নিষ্কাশন হতে পারে না। এতে খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই সঠিক সময় হলো খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর পানি পান করা উচিত। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে উঠে পানি পান করে আবার ঘুমানো। দিনে যেমন পানি পান করার উপকারিতা আছে। তেমন রাতে বেশি পানি পান করা খুবই ক্ষতিকর। কারণ শোয়ার পর আমাদের শরীর ততটা একটিভ থাকে না। তাই পানি কোনরকম ফিল্টার ছাড়াই কিডনিতে পৌঁছে যায়। যা আমাদের কিডনির জন্য অনেক ক্ষতিকর। ঘুম থেকে উঠে বারবার টয়লেটে যাওয়ার ফলে পরেরবার ঘুম আসতে অনেক প্রবলেম হয়। তাই দিনের বেলাতেই উচিত প্রয়োজনীয় পানি পান করা। সাথে সাথে পানি পান করার মাঝে যেন 45 থেকে 60 মিনিট গ্যাস থাকে। সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে খুব দ্রুত পানি পান করতে থাকলে তা ফিল্টার হওয়ার আগেই তা মূত্রনালী দিয়ে বের হয়ে যায়। যার ফলে কিছু সময় পর পর টয়লেটে যাওয়া বাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

 

পানি পান করার সঠিক নিয়ম ও কিভাবে পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে?

 

যখন আপনার প্রস্রাব হলুদ না হয়ে সাদা হচ্ছে তখন বুঝতে হবে আপনার আর পানির প্রয়োজন নেই। তাই প্রস্রাবের 15 থেকে 20 মিনিট পর পানি পান করা উচিত তাহলে আপনার কিডনীও একটু রেস্ট নিতে সময় পায় শসা, টমেটো, কলা,  ডালিম ইত্যাদি এসব ফল খাওয়ার পর পানি খাওয়া একদম উচিত নয়। কারণ এসব ফল খাওয়ার পর পানি খেলে আপনার পাকস্থলীতে খাবার অনেক শক্ত হয়ে যায়। এতে করে আপনার খাবার হজম হতে সময় অনেক বেশি লাগে এবং অনেক শক্তি খরচ হয়। আরো যেমন চা-কফি স্যুপ ইত্যাদি এসব খাবার খাওয়ার পরে ঠান্ডা পানি খাওয়া উচিত নয়। কারণ গরম খাবার খাওয়ার পর ঠান্ডা পানি খেলে দাঁত মাড়ির অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে।

 

এখন বলছি পানি পানের সঠিক সময়

 যেমন খাওয়ার আগে পানি দিয়ে প্লেট থাকি। তেমন আমাদের পেট পরিষ্কার করতে পারি অনেক কাজ করে থাকে। সকালে খালি পেটে পানি পান করলে আমাদের পেট অনেক পরিষ্কার হয়। আর রাতে খাবার পর, পানি পানির থেকে দুধ পান করা অনেক ভালো। কারণ দুধে অনেক ভিটামিন ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। আর প্রতিবার পানি পানির মধ্যে এক ঘন্টার মতো গ্যাপ রাখতে হবে তাহলে আমাদের কিডনি সুস্থ থাকবে। আর যারা এক্সারসাইজ করেন তাদের জন্য একগ্লাস পানি একসাথে পান করা উচিত নয় এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে, সাথে কিডনির সমস্যাও হতে পারে। এক্সারসাইজ করার সময় হালকা একটু করে পানি খেয়ে নিতে পারেন, যেহেতু শরীরের ঘাম বের হয়ে পানি বেরিয়ে যাচ্ছে, সেহেতু একটু পরপর পানি খেতে পারেন 10 থেকে 15 মিনিট পর পর একটু করে। এতে শরীরের জন্য কিডনির জন্য ভালো। কিডনি সুস্থ থাকবে। আর আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাইলে পানি পানে একটু সচেতন হতে হবে।

 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url